Sunday, March 21, 2021

সব সমস্যার সমাধান নয় আত্মহত্যা

 আত্মহত্যা!আজকের আধুনিক যুগে আত্মহত্যা হয়ে উঠেছে একটি ফ্যাশন । পারিবারিক সমস্যা হোক বা কর্মজীবনের বিফলতা কিংবা প্রেমে ব্যর্থ মানুষ খুঁজে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার এটাই যেন একটি সহজ উপায় দিন দিন আত্মহত্যার পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে ইহা এক রোগের ন্যায় মানুষের মৃত্যু ডেকে আনছে। সামনে আসছে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ।

  সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান মতে, বছরে গোটা পৃথিবীর যত মানুষ আত্মহত্যা করে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয়৷ সংখ্যার বিচার করলে বিশ্বে বছরে গড়ে আট লাখের মতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ঘটে ভারতে৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা দেখা যায় ভারতের দক্ষিণী রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রে৷ দেখা গেছে, এ সমস্ত আত্মহত্যার প্রধান কারণ  দাম্পত্য তথা পারিবারিক বিবাদ ,দুরারোগ্য অসুখ, এবং আর্থিক সমস্যা৷ তাছাড়াও যুবকদের মধ্যে আছে পরীক্ষায় ফেল, প্রেমে ব্যর্থতা বা বেকারত্ব৷২০১৬ সালে ভারতে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ২৩০,৩১৪ জন। এই আত্মহত্যার সাধারণ একটি ব্যাপার হলো ১৫-২৯ বছর বা ১৫-৩৯ বছরের মানুষ বেশি আত্মহত্যা করেছে। এনসিআরবি’র তথ্য মতে, ২০১৯ সালে ভারতে মোট ১০ হাজার ২৮১ জন কৃষক ও ৩২ হাজার ৫৬৩ জন দিনমজুর আত্মহত্যা করেছেন। এই সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ছয় শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে দেশটিতে ১০ হাজার ৩৫৭ জন কৃষক ও ৩০ হাজার ১৩২ জন দিনমজুর আত্মহত্যা করেছিলেন।

  

ভারতে আত্মহত্যা সবথেকে বেশি হয় কেন? আত্মহত্যা নিবারণের উপায় বা কী? পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতাজনিত মানসিক চাপ ও হতাশার মোকাবিলা করার শক্তি মানুষ যখন হারিয়ে ফেলে তখনই আত্মহত্যার মতো অন্তিম পদক্ষেপ বেছে নেয় মানুষ৷এটা কমাতে হলে মনোরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে তার প্রতিকারের কথা চিন্তা করতে হবে৷ কৃষকদের আত্মহত্যা নিবারণে চাই সরকারি ও সামাজিক সমর্থন৷ এবং কমবয়সি ছেলে-মেয়েদের মানসিক সমস্যা বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিসঙ্গতার সমস্যা অনুধাবন করে তার প্রতিকারে মানসিক তথা সামাজিক সমর্থন দেওয়া৷ 


আজ আত্মহত্যাকারীদের বা যারা মনে মনে আত্মহত্যা করবেন বলে ভাবছেন তাদের উদ্দেশ্যে  বলতে চাই মানুষ বাঁচার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে। এক বেলা খাবারের সংগ্রহে কত ক্ষুধার্ত মানুষ কনকনে শীতে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে লোক পথের পাশে শীতবস্ত্রহীন হয়ে শীতের সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। কত রোগী আজ হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। শুধু বেঁচে থাকার আশা । তোমরা তো নিজের সুস্থ, সবল দেহ নিয়েও আত্মহত্যার মতো ভুল পথ বেছে নিচ্ছ কাপুরুষের মতো । ভাই ও বোনেরা,আত্মহত্যা করলে যদি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত তাহলে আজ সব মানুষই আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিত । উত্থান-পতন সুখ দুঃখের জীবনে সামান্যতম দুঃখ্য হলে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই, আজ দুঃখ্য আসলে কাল সুখ আসবে । বিধির বিধান এটি । প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদের জন্য আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিয়ে জীবন শেষ করে দিয়ে কি লাভ হবে ।  কয়েকদিনের প্রেম বা সম্পর্কের জন্য ওরা ভুলে যায় চিরঋণী পরিবারের ভালোবাসা,ভুলে যায় তার পরিবার, তার সমাজ। 

              সবার শেষে একটি কথাই বলবো, যতই ডিপ্রেশনে থাকো না কেন ভূল সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নেবেন না।  মনে রাখবেন নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজের উপর ভরসাই যথেষ্ট। ভেঙ্গে না পড়ে লড়াই করতে শেখো তবেই জীবনে সফলতা আসবে। 


লেখা :- সাব্বির হোসেন মুন্না